তৃতীয় দিনে মাঠে নামার সময় দু’দলের খেলোয়াড়েরা গার্ড অব অনার দিয়ে বরণ করে নেন জিমিকে। মনে হচ্ছিলো আজকেই জিমির শেষ দিন। কেননা দ্বিতীয় দিনে ইংল্যান্ড ৩৭১ রানে থেমেছে। অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ দিনশেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ৭৯ রান। তাই স্বাভাবিক ভাবেই ধরে নেয়া যায় আর বেশিদূর গড়াবেনা ইনিংস।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের যখন শেষ উইকেট বাকি তখন নিঃসন্দেহেই সবার চাওয়া ছিলো ইনিংসের ইতিটা জিমির হাতেই ঘটুক। শেষ উইকেটটা জিমিই তুলে নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করুক। উড়তে থাকা আটকিনসনও স্লো হয়ে গেছিলেন। পরপর ২ ওভারে উইকেট নেননি। কিন্তু ভাগ্য যে চাই ছিলোনা ইনিংস জিমির হাতে শেষ হোক। তাই শেষ উইকেটটা আসলো আটকিনসনের হাতেই।
রাজকীয় এক অধ্যায়ের শেষ হলো লর্ডসে। সবাই করতালি দিয়ে অভিবাদন জানালো জিমিকে। জমিও নিজের কান্না সংবরণ করতে পারেননি। ২১ বছরের বর্ণিল এক অধ্যায়। জিমি শুধু রূপকথা নয়, জিমি রূপকথার বাস্তব প্রতিকৃতি। অনেকের শৈশব-কৈশর-যৌবন রঙিন করেছে জিমি। ক্রিড়ামোদীদের প্রশান্তি দিয়েছে জিমির ইনিংস। ২০০৩ সাল থেকে যেই লর্ডসে শুরু হয়েছিলো জিমির শুরু সেই লর্ডস সাক্ষী হয়ে রইলো শেষ দিনেও।
জিমি হয়তো ফিরবেন ভিন্ন কোন পরিচয়ে। তবে বাইশগজের জিমি আর জিমির আইকনিক সব সেলিব্রেশন এইসকল প্রজন্মের কাছে ছবি হয়ে রয়ে যাবে হৃদয়পটে। টি-২০, ওয়ানডের বর্ণিল সময়ে জিমি সাদা পোশাকে ইনিংস রাঙিয়েছেন। শেষ দিনেও দুর্দান্ত স্পেলে রান আটকিয়ে গেছেন। দুই ইনিংসে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে শেষ টেস্টকেও করেছেন রঞ্জিত।
২১ বছরের বর্ণিল ক্যারিয়ারে ১৮৮ টেস্টে তিনি ৪০ হাজার ৩৭টি বৈধ ডেলিভারি করেছেন। ভাবা যায় একজন পেসারের ক্যারিয়ারে এত অর্জন যোগ হবে? ১৮৮ টেস্টে তিনি নিয়েছেন ৭০৪ উইকেট। এর মধ্যে ৩২ বার ইনিংসে ৫ উইকেট, ৩ বার ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছেন। ১০৭টি ক্যাচ নিয়েছেন। ৪০১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৫০ হাজার ৪৩টি বৈধ ডেলিভারিতে নিয়েছেন ৯৯১টি আন্তর্জাতিক উইকেট।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম পেসার হিসেবে এবং দীর্ঘতম ক্যারিয়ার গড়া পেসার হিসেবে সবদিক বিবেচনা করে নির্দ্বিধায় বলা যায় এই অসাধারণ রেকর্ড ভাঙার সাধ্য আছে কার? যা কেবল জিমিকে দিয়েই সম্ভব।
শুভ বিদায় জেমস মাইকেল অ্যান্ডারসন। ক্রিকেট বিশ্ব সম্মান চিত্তে চিরকাল স্মৃতিতে রাখবে তোমায়।