নগরীর কোলাহল থেকে দূরে সাগরের কাছাকাছি প্রকৃতির সবুজাভ আভায় নিমজ্জিত সাগরিকায় অবস্থিত চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী ক্রিকেট স্টেডিয়াম। আর মাত্র দু’দিন পরেই যেখানে মাঠে গড়াবে বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার দ্বিতীয় টেস্ট। প্রথম টেস্ট শেষে দল ইতিমধ্যেই চট্টগ্রাম আসার উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে। একটু পরেই বিমান রওনা হবে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে।
চট্টগ্রামের পিচ বর্তমানে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। সবুজ ঘাসে আবৃত মাঠের সৌন্দর্য দেখতে বেশ মনোমুগ্ধকরই লাগছে। সচরাচর বৃষ্টির দিনগুলোতে মাঠের অবস্থা এমনই থাকে। পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় যেসময়। আর বৃষ্টিস্নাত সময়ে স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তবে সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার হলো বৃষ্টির সীজন শেষ হলেই এমন অবস্থা আর বিদ্যমান থাকেনা।
চট্টগ্রামের পিচ নিয়ে সবসময় কথা হয়। চট্টগ্রামে খুব বেশি আন্তজার্তিক ম্যাচ থাকেনা। তবে যখনই আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় তখন কোন না কোন কারণে মাঠ বা পিচ অথবা আউটফিল্ড নিয়ে কথা উঠে। কিন্তু কখনো মাঠের সার্বিক অবস্থা নিয়ে কেউ খুব একটা মাথা ঘামায় না। স্বাভাবিকভাবেই প্রায় খেলা ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়াতে সবার নজরও মিরপুরকে ঘিরেই থাকে। সে হিসেবে চট্টগ্রাম খুব একটা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসেনা।
যেহেতু সামনে সিরিজ আর মাঠের কন্ডিশন ভালো। সেই সুবাদে মাঠ থেকে ঘুরে আসার লোভ সামলানোর বেশ কষ্টকর হচ্ছিলো। যার ফলে মাঠের সৌন্দর্য্য অবলোকনে মাঠে যাওয়া। যে সময়টায় গিয়েছি সেই সময়টায় মাঠে পানি দেওয়া হচ্ছিলো এবং কাজ চলমান ছিলো। স্বভাবতই তখন প্রশ্ন আসবে পানির উৎস নিয়ে। যদি বলা চলে পিচ বা মাঠ ঠিক রাখার জন্য পানি অন্যতম উপাদান।
এবার আসা যাক কি পরিমাণ পানি প্রয়োজন রোজ? প্রতিদিন আড়াইলক্ষ লিটার পানি প্রয়োজন হয় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের জন্য। তবে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা না থাকায় রোজ পানি দেওয়া সম্ভব হয়না। চট্টগ্রাম ওয়াশা থেকে কোন প্রকার পানি সহায়তা না থাকার ফলে আশেপাশের পুকুর থেকেই পানি সংগ্রহ করতে হয় স্টেডিয়ামে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষকে। আর পানি সংকট সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করে অফ সীজন গুলোতে। বৃষ্টি না থাকলে পানি পাওয়া যায় খুবই কম। যার ফলে সারাবছর পিচের বা মাঠের একই অবস্থা বিদ্যমান রাখা বা কন্ডিশন ভালো রাখা সম্ভবপর হয়না।
এই সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান চাইছেন সংশ্লিষ্টরা। নাহলে পিচের কন্ডিশন সবসময় ভালো রাখা সম্ভব নয়। পিচের উপর ম্যাচের ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করে। চট্টগ্রামের পিচকে বাংলাদেশের জন্য সবসময় লাকি চার্ম হিসেবে ধরা হয়৷ তাছাড়া একটা আন্তর্জাতিক পিচ হিসেবে সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান করা কর্তাদের কাছে সবসময়কার দাবি। এরই সাথে স্টেডিয়ামে আরও অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে সংস্কার প্রয়োজন। স্টেডিয়ামের সার্বিক সংস্কার নিশ্চিত করে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন স্টেডিয়াম তৈরি করা সময়ের দাবী।
প্রতিটা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম একটা দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরে বিশ্বের কাছে। আন্তর্জাতিক সিরিজগুলোতে বিদেশি সমর্থকদের গ্যালারি মাতাতে দেখা যায়। তাদের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে আমাদের স্টেডিয়ামের সার্বিক অবস্থা উঠে আসছে। তাই নজর দেওয়া উচিত স্টেডিয়ামের গ্যালারি, জায়ান্ট স্ক্রিন, ইন্টেরিয়রসহ আশেপাশের সবকিছুতে। স্টেডিয়ামের আশেপাশে ঘাসের পরিমাণ এতই বেশি যে সাপের উপদ্রপ বেড়ে যায়। যা অনেক বিপজ্জনক। প্রচুর পরিমাণে জায়গা থাকা স্বত্ত্বেও অনেক জায়গা এখনো অকেজো পড়ে রয়েছে।
দু’দিন পরেই আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এরপর বিপিএলের আসর ঘনিয়ে আসছে। সব মিলিয়ে স্টেডিয়ামের সার্বিক উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়া এখন বেশ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ক’দিন আগে ক্রীড়া উপদেষ্টা মাঠ পর্যবেক্ষণ করেছেন। যদিও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুতই স্টেডিয়ামের সার্বিক উন্নতির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং সার্বিক সংস্কার কার্যক্রম শুরু হবে। তবে পানি সমস্যা সমাধন নিয়ে এখনও পুরোপুরি আশ্বাস মেলেনি কোথাও। এর জন্য বিসিবির আরও তৎপর হওয়া উচিত। অতিদ্রুত সার্বিক সমস্যার সমাধান হোক সেটাই প্রত্যাশা থাকবে।