
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (BCB) এসেছে নতুন নেতৃত্ব। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এক অনন্য নাম, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক এবং বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল এখন বোর্ডের সভাপতি। শুক্রবার অনুষ্ঠিত এক বোর্ড সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে তাকে নির্বাচিত করা হয়। এই পরিবর্তন শুধুমাত্র ব্যক্তির নয়, বরং দৃষ্টিভঙ্গি, কাঠামো এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় এক নতুন যুগের সূচনা বলেই বিবেচিত হচ্ছে।
এর পেছনের ঘটনা প্রবাহও যথেষ্ট নাটকীয়। বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (NSC) এক অনলাইন সেশনের মাধ্যমে বুলবুলকে NSC মনোনীত কাউন্সিলর হিসেবে অনুমোদন দেয়। পরদিন, অর্থাৎ শুক্রবার, সরকারি গেজেট জারি করে তাকে BCB পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর সেই পরিচালক হিসেবেই তিনি বোর্ড সভায় অংশ নিয়ে নির্বাচিত হন সভাপতি হিসেবে। এটি অনেকটাই তার পূর্বসূরি ফারুক আহমেদ-এর মতো একটি পথ অনুসরণ করে হলেও, প্রেক্ষাপট ছিল সম্পূর্ণ আলাদা।
ফারুকের অপসারণ হয় নাটকীয়ভাবে। বোর্ডের আটজন পরিচালক তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। এই অনাস্থার ভিত্তিতে NSC তার পরিচালক পদ বাতিল করে, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার সভাপতির পদ হারানোর পথে নিয়ে যায়। যদিও ফারুক আহমেদ এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (ICC)-এ সরকারি হস্তক্ষেপ নিয়ে অভিযোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তবুও নতুন নেতৃত্বের পথ খুলে যায়।
আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বোর্ড সভাপতি হওয়া শুধু একটি নিয়োগ নয়, বরং বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। একজন ক্রিকেটার হিসেবে তিনি ছিলেন সৎ, নিবেদিতপ্রাণ ও দূরদর্শী। ২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টেই তিনিই দেশের প্রথম শতরানটি করেন। ক্যারিয়ারে তার অসাধারণ নেতৃত্ব এবং কঠিন সময়ে দলকে ধরে রাখার ক্ষমতা তাকে ভিন্ন মর্যাদায় নিয়ে গেছে।
খেলার মাঠের বাইরেও বুলবুলের ভূমিকা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (ICC)-এর এশিয়া ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন। সেখানে তিনি আফগানিস্তান, নেপাল, মালদ্বীপসহ উদীয়মান ক্রিকেট জাতিগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন এবং ডেভেলপমেন্ট কাঠামো গড়ে তুলেছেন। এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট এবং তৃণমূল স্তরের প্রতিভা বিকাশে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলতে পারে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রশাসনে কাজ করার সুবাদে তিনি জানেন কীভাবে একটি বোর্ডকে পেশাদার ও স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করতে হয়। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ক্রিকেট আরও বেশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, আধুনিক কৌশল ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। ICC ইতোমধ্যেই তাকে এই দায়িত্ব পালনের জন্য ছুটি দিয়েছে এবং নিশ্চিত করেছে, বুলবুল তার মেয়াদ শেষে ICC-তে পুনরায় যোগ দিতে পারবেন।
সব মিলিয়ে, একজন প্রাক্তন ক্রিকেটার, আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রশাসক এবং উন্নয়ন নেতৃত্বে অভিজ্ঞ মানুষ হিসেবে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বোর্ড সভাপতি হওয়া বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য একটি আশাব্যঞ্জক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। বর্তমান পরিস্থিতিতে যেখানে স্বচ্ছতা, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও কাঠামোগত উন্নয়ন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেখানে তার উপস্থিতি এক নতুন পথের সূচনা করতে পারে।