
“Ee Sala Cup Namde”— প্রতিবারই যেন এক ব্যর্থ আশা হয়ে ফিরে আসত এই স্লোগানটি। আইপিএলের অন্যতম জনপ্রিয় দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB) বছরের পর বছর ধরে এই ট্রফির পেছনে ছুটেছে, কিন্তু প্রতিবারই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। অবশেষে ২০২৫ সালের ৩ জুন, ফাইনালে সেই দীর্ঘ ১৮ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটল। ভক্তদের কান্না এবার আনন্দের, হতাশার বদলে বিজয়ের চিৎকার গ্যালারিতে।
ফাইনাল ম্যাচে আহমেদাবাদের মাঠে টসে হেরে ব্যাট করতে নামে বেঙ্গালুরু। শুরুটা স্লো হলেও দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৯০/৯—যা প্রথমে কম মনে হলেও শেষ পর্যন্ত তাতেই বিজয়ের মূলভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছিলো।
পাঞ্জাব কিংসের ব্যাটিং লাইনআপ ছিল এই টুর্নামেন্টে মারাত্মক। দু’দিন আগেই তারা ২০৪ রান তাড়া করেছে একই মাঠে। সেই জায়গা থেকে ১৯১ রান তাড়া করা তাদের জন্য খুব একটা কঠিন হওয়ার কথা না। কিন্তু এবার পিচের আচরণ ছিল ভিন্ন—ধীর, কিছুটা অস্বাভাবিক বাউন্স, আর তার উপর চাপের ফাইনাল।
যেখানে পাঞ্জাবের শক্তিশালী ব্যাটসম্যানেরা নড়বড়ে হয়ে পড়েন, সেখানে একাই লড়েছেন শশাঙ্ক সিংহ। তার ৩০ বলে ৬১ রানের অপরাজিত ইনিংসটি ছিলো দুর্দান্ত। শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৯ রান, আর সেই ওভারের শেষ চার বলে শশাঙ্ক হাঁকিয়েছেন একের পর এক বাউন্ডারি—কিন্তু হারের ব্যবধান কমানো ছাড়া আর কিছুই হয়নি।
বেঙ্গালুরুর জয়ের নায়ক শুধু কোহলি নন। বোলিং আক্রমণে দুর্দান্ত ছিলেন ক্রুনাল পাণ্ডিয়া (২-১৭), ভুবনেশ্বর কুমার (২-৩৮), আর যশ দয়াল। কোহলি ছাড়া প্রত্যেকেই অতীতে অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে আইপিএল জিতেছেন, কিন্তু এবার RCB-এর জার্সিতে এনে দিলেন স্বপ্নের শিরোপা।
খেলা শেষে এক আবেগঘন দৃশ্য তৈরি হয় মাঠে। ভিরাট কোহলি, যিনি দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বারবার সেরা খেলোয়াড় হলেও কখনও আইপিএল জিততে পারেননি, এবার তার কাঁধে লাল-সোনালি পতাকা আর চোখে জল। তার সেই ১৮ নম্বর জার্সির সঙ্গে যেন মিলেই গেল দলের ১৮ বছরের অপেক্ষা।
আরও একবার প্রমাণ হল, কেবল তারকা খেলোয়াড় নয়—দলগত প্রচেষ্টা, অভিজ্ঞতা, চাপ সামলানোর দক্ষতা আর কিছুটা ভাগ্যই চ্যাম্পিয়ন বানায় একটি দলকে।
পাঞ্জাব কিংসের জন্য এটা এক বেদনার রাত হলেও তারা এই টুর্নামেন্টে অনেক হৃদয় জয় করেছে। তাদের সময়ও আসবে। কিন্তু এই রাত, এই শিরোপা, এই আনন্দ—সবই এবার বেঙ্গালুরুর। অবশেষে, Ee Sala Cup Namde—এই বছর কাপটা আসলেই তাদেরই হল।