Google search engine

আজ শোনাব লাহোরের এক তরুণের গল্প। যিনি ১৯৬৬ সালের ৩ জুন পাকিস্তানের লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন। হতে চেয়েছিলেন টেবিল টেনিস খেলোয়াড়। কিন্তু বনে গেছেন বিশ্বসেরা বাঁহাতি পেসার।

জন্ম পাকিস্তানের একটি উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে। বাবা একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন, তারই ইচ্ছায় ওয়াসিমকে লাহোরের একটা স্কুলে পড়াশোনার জন্য পাঠানো হয়। পরবর্তীতে দাদার সাথে থাকা শুরু করেন। দাদা ছিলেন ক্রিকেটপ্রেমী। আর সেখান থেকেই টেবিল টেনিস ছেড়ে ওয়াসিমের ক্রিকেটে যাত্রা।

স্থানীয় ক্লাবে খেলা শুরু করলেও সুযোগ পেতেন না খুব একটা। পরবর্তীতে লাহোরে আয়োজিত ক্রিকেট ক্যাম্পে বোলিংয়ের অডিশন দিতে যান ওয়াসিম। প্রথম দু’দিন সুযোগ পাননি, ৩য় দিনে বোলিং দিয়ো নির্বাচক হাবিব আহসানের নজরে আসেন। পাকিস্তান তখন জাভেদ মিঁয়াদাদের নেতৃত্বে খেলছে। প্র্যাকটিসে বোলিং দেখে ওয়াসিমকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হন জাভেদ।

নিউজিল্যান্ড সফরে দলে সুযোগ পান। ১ম টেস্টে কেবল ২ উইকেট নেন। পরবর্তী টেস্টেই ২ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়ে বাজিমাত করেন। সর্ব কনিষ্ঠ বোলার হিসেবে এক ম্যাচে দশ উইকেট পাওয়ার রেকর্ড করেন, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশী বোলার এনামুল হক জুনিয়র ভেঙেছিলেন। সেখান থেকেই ওয়াসিমের যাত্রা শুরু। এরপর দলের নিয়মিত অংশ হয়ে যান।

ক্যারিয়ারের ৩য় ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ উইকেট পান। টেস্ট ও ওয়ানডে দু’টি ভিন্ন ফরম্যাট। আর এই দু’ফরম্যাটেই সফলতা পেয়েছেন এমন কারো সংখ্যা বোশ নগণ্য। তার মাঝে, দুই ফরম্যাটেই ন্যূনতম ৪০০ উইকেট পেয়েছেন এরকম বোলারের সংখ্যা মাত্র ২ জন; মুত্তিয়া মুরালিধরন এবং ওয়াসিম আকরাম। তাও একমাত্র ফাস্ট বোলার ওয়াসিম। ১৮বছরের বেশি ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তিনি বেশ বৈচিত্র্যময় বোলার ছিলেন। পুরনো বলে রিভার্স সুইং করার এক আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল তার। এই ক্ষমতার কারণেই স্লগ ওভারের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত বোলার ছিলেন ওয়াসিম।

ওয়াসিম আকরাম একমাত্র বোলার, যিনি টেস্ট এবং ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই দু’টি করে হ্যাটট্রিক রয়েছে।
এছাড়াও ওয়াসিম আকরাম সেই ছয়জন ক্রিকেটারের একজন, যিনি এক ওভারে চারটি উইকেট শিকার করেছেন। প্রথম বোলার হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৫০০ উইকেটের মাইলফলক অতিক্রম করেছেন। পরবর্তীতে অবশ্য মুরালিধরন তার এই রেকর্ড ভেঙেছিল, তবে প্রথমতো প্রথমই।

ব্যাট হাতেও লোয়ার অর্ডারে বেশ কার্যকরী ছিলেন। টেস্টে তাঁর তিনটি শতক রয়েছে। এছাড়াও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৫৭ রানের একটা ইনিংস খেলেছিলেন, যা ৮নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। সেই ইনিংসেই তিনি ১২টি ছক্কা মেরেছিলেন, যা এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কা মারার রেকর্ড। পাকিস্তানি অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডও এটাই। এছাড়াও বিভিন্ন সময় কার্যকরী ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েছেন। ১৯৮৯ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত নেহেরু কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের জয়ের নায়ক ছিলেন ওয়াসিম।

১৯৯২ এর ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনাল ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয় পাকিস্তান। সেবার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ফাইনালে উঠো পাকিস্তান। সেদিন ব্যাট হাতে ১৯ বলে ৩৩ রানের একটা ক্যামিও খেলেন ওয়াসিম, যা পাকিস্তানকে ২৪৯ রানের সংগ্রহ এনে দেয়। কিন্তু তৎকালীন শক্তিশালী ইংল্যান্ডের কাছে সেই রান তাড়া করা খুব একটা কঠিন ছিলনা। তখন ইংল্যান্ডকে চাপে ফেলার কাজটা করেন ওয়াসিম। শুরুতে ইয়ান বোথাম, এরপর ল্যাম্ব, এরপর লুইসকে ফিরিয়ে রীতিমতো দলের জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন তিনি। ইংল্যান্ড ২২৭ রানে অল আউট হয়। ২২ রানে জয় পায় পাকিস্তান। পাকিস্তান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। সেবার ফাইনালে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন ওয়াসিম আকরাম।

অনেক বড় বড় তারকা ক্রিকেটার ওয়াসিম আকরামকে সর্বকালের সেরা ফাস্ট বোলার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। খেলা ছাড়ার পর তিনি বেশ কিছুদিন ধারাভাষ্যকার ছিলেন। বর্তমানে তিনি কোচিং পেশায় মনোনিবেশ করেছেন। তার হাত ধরে উঠে আসবে আগামীর দুর্দান্ত বোলাররা।

Google search engine

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here