Google search engine

বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে অনেক নক্ষত্র উদিত হয়ে আবার ডুবে গেছে খুব অল্প সময়েই। রাহুর করালগ্রাসে হারিয়ে গেছে অতল গহীনে। অথচ থাকার কথা ছিলো সেরাদের কাতারের একজন হয়ে। দুর্দান্ত ক্যারিয়ার শুরু করে উড়তে থাকা অবস্থায় হঠাৎ করে খেই হারিয়ে ফেলেছেন অনেকেই।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনেকেই নিজের প্রতিভার সুবিচার করতে পারেন নি। হতে পারতেন হিরো, কিন্তু হয়ে গেছেন ভিলেন। হওয়ার কথা ছিলো টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা পেসারদের একজন।সাদা পোশাকে একজন দুর্দান্ত পেসারের অভাব বাংলাদেশে ক্রিকেটের আজন্ম। যে অভাব খুব সহজে পূর্ণ হওয়ার নয়। মাশরাফির পর আরো একজন ছিলেন যোগ্য উত্তরসূরী। কিন্তু নিজের স্বভাবজনিত কারণ বলি বা মাশরাফির মতো ইনজুরিজনিত কারণ, অল্পেই তাকেও আমরা হারিয়েছি।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুভ সূচনা হয়েছিল স্বপ্নের ক্যানভাস লর্ডসের বুকে। সেই লর্ডস যাকে ‘ক্রিকেটের মক্কা’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। সেই লর্ডসের মাটিতে ৫ উইকেট শিকার করে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম লিখান শাহাদাত হোসেন রাজীব। লর্ডসের কম্পটন গ্যালারিতে গ্রাহাম গুচ এবং গ্রায়েম স্মিথের মতো দু’জন কিংবদন্তির মাঝে এখনো যার স্থিরচিত্র দৃশ্যমান।

লর্ডসে সেদিন তার আগ্রাসী বোলিংয়ের কাছে কুপোকাত হয়েছিলেন কুক, জিমি, ট্রট, মরগ্যান এবং টিম ব্রেসনান। ইংরেজরা সেদিন তার বোলিংয়ের কাছে অসহায় ছিলেন। ২০০৬ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারা ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম হ্যাট্রিক(ওয়ানডেতে) করেন তিনি। আগ্রাসী বোলিংয়ে একই ওভারে ফিরান মুফাম্বিসি, এল্টন চিগুম্বুরা এবং প্রসপার উৎসেয়াকে।

একসময় টেস্টে নিয়মিত মুখ ছিলেন শাহাদাৎ। হতে পারতেন বাংলাদেশের সেরা পেসারদের একজন। সাদা বলের ফরম্যাটে এখনো মাশরাফির পর পেসার হিসেবে সর্বোচ্চ উইকেট সংখ্যা তারই। কিন্তু ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা ছিলো ইনজুরি জর্জরিত। ২০১৫ সালে আবার সুযোগ পেয়েও ইনজুরির কারণে থেমে যেতে হয়। এছাড়াও ব্যক্তিগত জীবনে শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে হয়েছেন বিতর্কিত এবং পড়েছিলেন নিষেধাজ্ঞায়।

২০১৯ সালে জাতীয় লীগ চলাকালীন সময়ে সতীর্থ আরাফাত সানির গায়ে হাত তোলার অপরাধে ৩ লাখ টাকা আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি নিষিদ্ধ হয়েছিলেন পাঁচ বছরের জন্য সকল ধরনের ক্রিকেট থেকে। কিন্তু দুই বছরের শেষ হতে না হতেই, ক্যান্সারে আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসার খরচ চালাতে আবারও ক্রিকেটে ফিরতে চাইলে বিসিবি তাঁর শাস্তি মওকুফ করে সুযোগ করে দেন ২২ গজে ফেরার।

জাতীয় দলের জার্সি গায়ে সাদা ফরম্যাটের শুরুটা হয়েছিলো সতীর্থ মুশফিকুর রহিমের সাথে। মুশফিকুর রহিম এখনো জাতীয় দলের সাথে খেলছেন। আর শাহাদাৎ থেমে গেছেন ৩৮টি আন্তর্জাতিক টেস্টে ৭২ উইকেট, পাশাপাশি ব্যাট হাতে ৫২১ রান এবং ৫১টি ওডিআইতে ৪৭ উইকেট নিয়ে।

হতে পারতেন বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের অংশ। কিন্তু নিজের প্রতিভার সুবিচার করতে পারেন নি বলেই হয়তো অকালেই হারিয়ে গেছেন। এখন কেবল বাংলাদেশ ক্রিকেট সমর্থকেরা আক্ষেপ করেই বলে – আমাদের একজন শাহাদাৎ ছিলো, যে লর্ডস কাঁপিয়েছে। যার পেস বোলিং বিশ্বমঞ্চে অগ্নি জড়িয়েছে। এখন তিনি কেবল বাংলাদেশ ক্রিকেটের আজন্ম আক্ষেপ হয়েই রইলেন।

Google search engine

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here