এমসিজিতে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মধ্যকার ৪র্থ টেস্টে দুর্দান্ত জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ ৫দিন শেষে জয় এলো অজিদের পক্ষে। এই জয় ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে রবে।
এই টেস্টে ১ম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ৪৭৪ রান সংগ্রহ করে। শুরুতে অভিষিক্ত স্যাম কনস্টাসের ৬০ রান এবং ওসমান খোয়াজার ৫৭ রানের ইনিংস, স্টিভ স্মিথের ১৪০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস, মার্নাস লাবুশেনের ৭২ রান এবং অধিনায়ক কামিন্সের ৪৯ রান অস্ট্রেলিয়াকে বেশ ভালো সংগ্রহ এনে দেয়। ভারতের পক্ষে জাসপ্রীত বুমরাহ ৪টি উইকেট তুলে নেন। ৩টি উইকেট নেন জাদেজা।
২য় ইনিংসেও অস্ট্রেলিয়া ২৩৪ রান তোলে, যেখানে লাবুশেন ৭০ রান এবং কামিন্স ৪১ রানের ইনিংস খেলেন। বুমরাহ আবারও দুর্দান্ত বোলিং করে ৫ উইকেট শিকার করেন।
অন্যদিকে, ১ম ইনিংসে ভারত ৩৬৯ রান সংগ্রহ করে। যেখানে তরুণ ব্যাটার রেড্ডি ১১৪ রান করেন, এবং জয়সওয়াল করেন ৮২ রান। যেখানে প্যাট কামিন্স, স্কট বোল্যান্ড ও নাথান লায়ন ৩টি করে উইকেট নিয়ে ভারতের রান আটকাতে সহায়তা করেন।
২য় ইনিংসে, ৩৪০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারত মাত্র ১৫৫ রানে গুটিয়ে যায়। জয়সওয়ালের ৮৪ রানের ইনিংস ছাড়া বাকিরা কেউ খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। প্যাট কামিন্স, বোল্যান্ড ও লায়নের বোলিংয়ের সামনে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ ধসে পড়ে একের পর এক।
ম্যাচের পঞ্চম দিন শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসের শেষ উইকেট নিয়ে। যদিও কেবলমাত্র ৬ রান আসে। ভারতের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৪০ রানের এবং ৯২ ওভার খেলা বাকি।
ভারত ধীরগতিতে ইনিংস শুরু করে। নতুন বলের বিপক্ষে ভারতীয় ব্যাটাররা একে একে বিপর্যস্ত হচ্ছিলেন। শুরুতেই প্যাট কামিন্স রোহিত শর্মাকে গালিতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন। এরপর কেএল রাহুল এবং বিরাট কোহলির উইকেট হারায় ভারত। প্রথম সেশনের শেষ দিকে ৩৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ভারত।
মধ্যাহ্ন ভোজের পরও মনে হচ্ছিলো ড্রয়ের দিকে যাবে ভারত। জয়সওয়াল এবং ঋষভ পন্থ গুরুত্বপূর্ণ ৮৮ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। কিন্তু শেষ সেশনে পন্থ আউট হওয়ার পর ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ দ্রুত ভেঙে পড়ে।
শেষ সেশনে ভারত ২১ ওভার টিকে থাকার চেষ্টা করলেও অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা দুর্দান্ত বোলিং করে ৭টি উইকেট তুলে নেয়। স্কট বোল্যান্ড এবং কামিন্স তিনটি করে উইকেট নেন। কামিন্স ম্যাচ সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।
ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ডিআরএস প্রযুক্তি নিয়ে বিতর্ক হয়। জয়সওয়ালের ব্যাটের কিনারা ধরা পড়েছিল, তবে স্নিকোতে কিছু দেখা যায়নি। থার্ড আম্পায়ার শারফুদ্দৌলা টিভি রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত দেন। যদিও জয়সওয়াল আউট মেনে নিয়েছিলেন, মাঠ ছাড়ার সময় তিনি আম্পায়ারের সঙ্গে কিছুক্ষণ আলোচনা করেন।
অস্ট্রেলিয়ার এই জয় দলের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রথম টেস্টে পরাজয়ের পর সিরিজে ফিরে আসার জন্য এই জয় প্রয়োজন ছিলো। অন্যদিকে, ভারতের জন্য এই পরাজয় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে যাওয়ার পথে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিডনিতে চূড়ান্ত টেস্টের ফলাফলের উপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে।
মেলবোর্নের এই টেস্ট ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এক মহাকাব্যিক ম্যাচ হয়ে থাকবে। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের অসাধারণ পারফরম্যান্স এবং ভারতের কঠিন লড়াই টেস্ট ক্রিকেটের সৌন্দর্যকে আরও একবার ফুটিয়ে তুলেছে। আগামী সিডনি টেস্ট সিরিজের ভাগ্য নির্ধারণ করবে এবং দুই দলের জন্যই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।