Google search engine

পেশাগত কারণে হোক বা যেকোন কারণে, অজিদের প্রফেশনাল বলা হয়। ক্রিকেটে অজিরা বাকিদের চেয়ে চালচলন বা ধরনে আলাদা সবসময়৷ তরুণ বয়স থেকেই বেশ সম্ভবনাময়ী কিছু প্রতিভা উঁকি দেয়। কিন্তু আক্ষেপটা সেখানেই যখন সেই তরুণ প্রতিভা অকালেই হারিয়ে যায়। এমনি এক অকালে ঝড়ে পড়া তরুণ ফিলিপ হিউজ। যাকে হারানোর আক্ষেপ এখনো অনেক অজি ভক্তদের পোড়ায়।

পুরো নাম ফিলিপ জোয়েল হিউজ। খেলতেন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে। খুব অল্প সময়ে জাতীয় দলের সাদা পোশাকের ফরম্যাটে জায়গা করে নেন। কিন্তু শর্ট বলে দুর্বলতার ফলে খুব বেশিদিন ঠাঁই হয়নি তার। মাত্র ২০বছর বয়সে রেকর্ডের খাতায় নিজের নাম লেখান। নিজের দ্বিতীয় টেস্টে ১৬০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন।

হয়ত হতে পারতেন স্মিথ-ওয়ার্নারদের মতো সম্ভাবনাময়ী। কিন্তু নিয়তি হয়ত তার বিপরীতই চেয়েছিল। আজ বেঁচে রইলে হয়ত রেকর্ডবুকে যুক্ত হত দুর্দান্ত সব ইনিংস। কে জানত অকালেই নিভে যাবে ফুটন্ত এই ফুল? এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলনা কেউ। পুরো ক্রিকেট বিশ্ব সেদিন হতবাক হয়ে ছিল হিউজের এমন পরিণয়ে।

দিনটি ছিল ২৫শে নভেম্বর, ২০১৪। সিডনির হোমগ্রাউন্ড সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে তৎকালীন চলমান ঘরোয়া ক্রিকেট লিগ শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচে নিউ সাউথ ওয়েলস বনাম সাউথ অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। গ্যালারী ভর্তি দর্শকের উচ্ছ্বাস। ক্রিজে ব্যাট হাতে হিউজ, আর বল হাতে তেড়ে আসছে জাতীয় দলের আরেক সতীর্থ শন এ্যাবট। হিউজের রানের খাতায় তখন ৬৩ রান যোগ হয়েছে। তখনি ঘটে গেল অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। শন অ্যাবটের একটি বাউন্সারে হুক শট খেলতে গিয়েই হিউজির হেলমেটের ফাঁক এড়িয়ে বল গিয়ে লাগল তার ঘাড়ে। অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনায় তাৎক্ষণিক মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন হিউজ।

চারপাশের সব হৈ-হুল্লোড় বন্ধ হয়ে গেছে, স্তব্ধ হয়ে সবার মাঝে সুনসান নিরবতা বিরাজ করছে। সবাই আতঙ্কিত অনাকাঙ্ক্ষিত এমন ঘটনায়। এক মুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছিল হিউজ হয়ত উঠে দাঁড়াবেন, কিন্তু সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়ে হিউজ আর উঠলেন না। শন অ্যাবটসহ বাকি সবাই স্তম্ভিত হয়ে দৌড় দিলেন হিউজের দিকে। মাঠের বাইরে থেকে টিম ডাক্তাররা এল। কিন্তু না, প্রাথমিক চিকিৎসায় কোন কাজ হচ্ছিলনা। অগত্যা মাঠ থেকে স্ট্রেচারে করে সিডনি ভিন্সেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল হিউজকে। আকস্মিক এই দুর্ঘটনায় ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হল।

দলের সতীর্থ, পরিবারবর্গ, টিম ম্যানেজমেন্টের সবাই তখন ছুটেছেন হাসপাতালে। তখন সবার কেবল একটাই চিন্তা, যে করেই হোক হিউজকে উঠাতে হবে। টানা ২দিনের লড়াই-যজ্ঞ শেষে ২৭শে নভেম্বর ৬৩* রানে আজীবন অপরাজিত থেকে অচিনপুরের পথে হারিয়ে গেলেন সবার আদরের হিউজি। আজীবন নট আউট হিসেবে গেঁথে রইলেন সকল ক্রীড়াভক্তের হৃদয়ে। পুরো ক্রিকেটবিশ্ব স্তব্ধ, অজি ক্রিকেটে শোকের ছায়া, পরিবারের সবাই শোকে পাথর৷ পৃথিবীর সবথেকে কঠিন দৃশ্য, “পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ” – সবাই সেদিন দেখেছিলেন। সতীর্থকে হারিয়ে অজি ক্রীড়াঙ্গনে সেদিন শোকের কালোছায়া নেমে এসেছিল।

সতীর্থ শন অ্যাবটকে বহুদিন সেই শোকের ছায়া কালো মেঘের মত অনুসরণ করে ছিলেন। স্মৃতিতে আঘাত হেনেছে সতীর্থকে হারানোর শোক। আজও ২৭শে নভেম্বর পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে মনে করিয়ে দেয় দুর্বিষহ সেই স্মৃতি। অজি ক্রিকেটের কালো দিন হিসেবে এই দিন পালিত হয়। আর স্মৃতিতে অম্লান থাকে অপরাজিতভাবে স্ট্রাইকে থাকা হিউজ।

Google search engine

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here