ধর্মশালায় অজি-কিউইদের ম্যাচ টানটান উত্তেজনায় শেষ হয়েছে। দু’দলের ঝড়ো ইনিংসের মাঝে অবশেষে শেষ হাসি হেসেছে অজিরা। আসরের শুরু থেকে উড়তে থাকা কিউইরা ৫ রানে পরাজিত হয়েছে অজিদের কাছে। অন্যদিকে, কলকাতার ইডেনে দেখা গেছে ঠিক এর ভিন্ন রূপ। ডাচদের কাছে রান খড়ায় ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারের বেহাল দশায় শেষ হাসি হেসেছে ডাচরা।
শুরুতে অজি-কিউই ম্যাচের কথাই বলি। অজিদের এই ম্যাচে পুরোনো বিধ্বংসী ধাঁচেই দেখা গেছে শুরু থেকে। বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই শতরানের ইনিংস ছুঁয়েছেন ট্রাভিস হেড। ওয়ার্নার-হেড জুটির ঝড়ো ইনিংসে অজিরা দূরন্ত শুরু পায়। যদিও ওয়ার্নারের শতক ছোঁয়া হয়নি। তবে ইনজুরি কাটিয়ে হেডের এমন দুর্দান্ত ফেরা যেন মুগ্ধ করেছে সবাইকে। এই ম্যাচে চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছিল বাকিদের ব্যাটেও। ত্রিশ-চল্লিশোর্ধ্ব দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন বাকি ব্যাটাররাও। যার ফলে ৩৮৮ রানের সংগ্রহ পায় অজিরা। যদিও একটা সময় মনে হচ্ছিল চারশো ছাড়িয়ে যাবে।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা খুব একটা ভালো না হলেও, তৃতীয় উইকেট জুটিতে রবীন্দ্র এবং মিচেলের দুর্দান্ত জুটিতে এগিয়ে যেতে থাকে কিউইরা। মিচেলের শতক ছোঁয়া না হলেও রবীন্দ্র শতক ছুঁয়েছেন। বাকিদের ব্যাটে উল্লেখযোগ্য ইনিংস না আসলেও শেষ দিকে জিমি নিশামের ইনিংসে খুব ভালোভাবেই জয়ের পথে ছিলো কিউইরা। দুর্ভাগ্যবশত শেষ ওভারে নিশামের রানআউটে জয়ের আশা সেখানেই থেমে যায়। বাকিরা ম্যাচ জেতাতে সক্ষম হননি। অজিরা ৫ রানে জয় পায়। তীরে এসে তরী ডুবার এমন মুহূর্ত যেন কিউইদের ভাগ্যের লিখন বরাবরই।
অন্যদিকে, কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ব্যাটিংয়ে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। প্রথম ম্যাচের তুলনায় যাকে রান খরা বললে বোধহয় ভুল হবেনা। ডাচদের মাঝারি সংগ্রহের পর বাংলাদেশের ব্যাটিংয়েও দেখা গেছে বেহাল দশা। ১৪২ রানেই থেমেছে বাংলাদেশের ইনিংস। এ যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
সেই ম্যাচে শুরুতে টসে জিতে ব্যাটিং নেয় ডাচরা। ব্যাটিংয়ে নেমে যদিও শুরুটা ভালো হয়নি ডাচদের। খুব দ্রুত ২ উইকেট হারায় ডাচরা। তৃতীয় উইকেটে মোটামুটি সংগ্রহের পর আবারও পরপর দুই উইকেট হারায় ডাচরা। বাকিরাও খুব একটা উল্লেখযোগ্য রান পাননি। কেবল অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক এডওয়ার্ড এবং এঙ্গেলব্রেক্টের ব্যাট হেসেছে। দু’জনের কার্যকরী ইনিংসে ভর করে ডাচরা ২২৯ রানের মাঝরি সংগ্রহ পায়।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বেশ বিপাকেই পড়েন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। একের পর এক আসা-যাওয়ার মিছিলে ছিলেন সবাই। মিরাজ বাদে ত্রিশের উপর রান পাননি আর কেউ। যার ফলাফলস্বরূপ পরাজয়ের বৃত্ত ভাঙা হয়নি এই ম্যাচেও। ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিলে বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে ১৪২ রানে। ডাচরা জয় পেয়েছে ৮৭ রানে।
মাঠে ব্যাটারদের অবস্থা দেখে কেবল মনে পড়ছিলো বিখ্যাত সেই লাইনগুলো- “যেতে নাহি দিব হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়।”
আসা-যাওয়ার এই দৃশ্য অবশ্য আমরা বহু পুরোনো কাল থেকেই দেখে এসেছি। এরপরও শেষ অবধি আমাদের বিশ্বাস সবসময় অটুট থাকে। আমরা শেষ অবধি স্বপ্ন দেখি। কল্পনায় নানা ছবি আঁকি। যা মাঝে মাঝে কেবল আমাদের কল্পনাতেই রয়ে যায়।
আমরা বিশ্বাস করি, ভরসা করি। এক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত একটি উক্তি মনে পড়ছে- “বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর”। আমরা এই উক্তিতে বিশ্বাসী দাবি করে সবসময় বিশ্বাস করে যাই এইতো একটু চেষ্টা করলেই হবে। আমরা পারব, আমরা শেষ দিকে ঠিকই ঘূরে দাঁড়াবো।
সময় গড়িয়ে যায়। কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আর আসেনা। এরপরও আমরা এক ম্যাচ শেষ হলেই ফলাফল যাই হোক পরবর্তী ম্যাচ নিয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকি। যে স্বপ্ন কখনো শেষ হয়না। আমাদের ধৈর্য্য আছে, আমরা অপেক্ষা করতে ইচ্ছুক। সে যত সময় লাগুক। আমরা আছি, আমরা থাকবো। প্রতিটা বাংলাদেশ ক্রিকেট ভক্তের অবস্থাই যেন এমন।