বলা চলে ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। ক্রিকেট সুন্দর, ক্রিকেটে স্পোর্টসম্যানশীপ সুন্দর। তবে এই ভদ্রলোকের খেলার মাঝে নানা ধাঁচের লোক রয়েছে। তার মাঝে কিছু লোক আছেন যারা একেবারে নিরেট ভদ্রলোক। বেশ শান্তশিষ্ট স্বভাবের কারণে তারা সময়ের সাথে সবার কাছেই প্রিয় থেকে প্রিয়তর হয়ে উঠেন।
ক্রিকেটে কিউইদের ভদ্রলোকের দল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বলা হয়ে থাকে, কিউইরা স্বভাবতই অনেকটা শান্তশিষ্ট প্রকৃতির। তার মাঝে আলাদাভাবে যদি কাউকে নিয়ে বলতে যাই তবে উঠে আসবে কেন উইলিয়ামসনের নাম। ভদ্রলোককে যতই দেখি বেশ অবাক হই। কি করে এত ঠান্ডা মেজাজে সবকিছু সামাল দেন। কেউ বলতে পারে অভিজ্ঞতা কথা বলে, আবার কেউ বলতে পারে স্বভাবতই কেন এমনই।
২০১৬ সালে ম্যাককালামের অবসরে যাওয়ার পর সাদা পোশাকের নেতৃত্বে আসেন কেন। সেই থেকে বেশ লম্বা সময় ধরেই কিউইদের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি৷ তার নেতৃত্বে কিউইরা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। যেখানে কেনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো। এছাড়াও কিউইদের টেস্ট ইতিহাসে অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ টেস্ট জয়ের কৃতিত্ব তারই। তার নেতৃত্বে কিউইরা ৩৯টি টেস্ট ম্যাচের মাঝে জয় পেয়েছে ২২টিতে। যেখানে হারের সংখ্যা ৯ এবং ড্র হয়েছে ৮টি ম্যাচে।
কেনকে নিয়ে যদি আরেকটু খোলাসা করে বলতে যাই, ২০১৯ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে কেনের নেতৃত্বে দল ফাইনালে পৌঁছেছিল। যেখান থেকে দুর্দান্ত নেতৃত্বে দল এগিয়ে গেছে সুপার ওভার পর্যন্ত। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে সুপার ওভারে গিয়ে দুর্ভাগ্যবশত শিরোপা হাতছাড়া হয়ে যায়। সেবার ক্রিকেটপ্রেমীরা বেশ দুঃখ করেছিলেন বৈকি? অধরা বিশ্বকাপের দিকে কেনে অপলক অসহায় চেয়ে থাকা ছবি হয়তো কাঁদিয়েছে হাজারো কিউই ভক্তকে।
হেলতে দুলতে এতদূর এসে ম্যাচটা যখন সুপার ওভারে গড়ায়, হলফ করে বলতে পারি অনেকেই তখন প্রাণপণে চাইছিলো শিরোপাটা এবার কেনের হাতেই উঠুক। কিন্তু অদৃষ্টের কি পরিহাস, ক্রিকেটকে যতই বলা হোক ভদ্রলোকের খেলা, তবে এর নিয়মের মারপ্যাঁচ বেশ জটিল। আর এই জটিলতার কাছে সেদিন হেরে গেছিলো কেনের দল।
অসহায় দৃষ্টিতে ট্রফির দিকে চেয়ে থাকার সময়কালীন তার মুখে স্পষ্টত অঙ্কিত ছিলো বিষাদরেখা। কিন্তু যার অন্তর ঝকঝকে আয়নার মতো তাকে কিভাবে এই বিষাদ বেশিক্ষণ গ্রাস করে রাখে? ঠিকই কেন একটু পর আবার মুচকি হেসেছিলেন। যদিও আপাতদৃষ্টিতে মনে হতেই পারে নিছক ভদ্রতা রক্ষার্থেই কেন সেদিন না হেসে পারেন নি। তাকে যে সামনে এগিয়ে যেতে হবে সব বিষাদকে পিছনে ফেলে। এ যাত্রায় যে ভেঙে পড়া চলবেনা।
খুব বেশি সময় লাগেনি তার ভদ্রতার পুরষ্কার পেতে। তার দুর্দান্ত নেতৃত্বগুণে কিউইরা আরো শক্তিশালীরূপে ফিরেছে নতুন উদ্যমে। ২০১৯-২০২১ মৌসুমে আইসিসি কর্তৃক আয়োজিত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে ভারতের বিপক্ষে জয় লাভ করে কাঙ্ক্ষিত শিরোপা জয়ের মাধ্যমে কেনভক্তদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কিছুটা হলেও হয়তো কমেছে। কমবে নাই বা কেন? ট্রফি হাতে কেনের হাসি দেখে কেনভক্তকুলের চোখে তৃপ্তির পরশ লেগেছে।
কেনের এই যাত্রা হয়তো একদিন থেমে যাবে কোন একপ্রান্তে গিয়ে। কিন্তু কেন কিংবদন্তি হয়ে রইবে সবার মনে চিরতরে। কিংবদন্তিদের জন্ম হয়ই ইতিহাস জন্ম দেওয়ার জন্য। তারা কেবল ইতিহাসের জন্মই দেন না, সাথে উত্তরসূরীদের পথও বাতলে দেন। কেবলমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে নয়, কেন জীবিত থাকবেন সবার মাঝে নিরেট একজন ভদ্রলোক হিসেবে।