Google search engine

ক্রিকেটে ভেলকিবাজি হরহামেশাই চলে। যেকোন মুহূর্তে পাল্টে যেতে পারে পাশার দান। ক্রিকেট অনেকের কাছে আবেগের, অনেকের কাছে উপভোগের। এই আবেগের গ্রাসে অনেকসময় মানুষ এতোটাই আবদ্ধ হয়ে যায় যে ক্রিকেট তাদের কাছে চিরাচরিত অভ্যাসে পরিণত হয়। তবে ক্রিকেট কিন্তু একলাফে এই পর্যায়ে আসেনি। একদিনেও আসেনি।

দুর্দান্ত সব ক্রীড়াব্যক্তিত্ব ক্রিকেটের রথকে এতদূর টেনে নিয়ে এসেছেন। চোখ বন্ধ করলেই মাঝে মাঝে মনে হয় সকল কিংবদন্তিকে চোখের সামনেই দেখা যাচ্ছে। কিভাবে তারা উচ্চশিখরে উঠে চলেছেন দুর্বার গতিতে? অদম্য সাহস নিয়ে এগিয়ে গেছেন আর আমাদের করেছেন আমোদিত।

ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা কিংবদন্তিদের বিচারে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের নাম যে কেউ নির্দ্বিধায় উচ্চারণ বা স্মৃতিচারণ করবেন। শৈল্পিকতার বিচারে ক্রিকেটকে যিনি নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। একটু পেছনে গেলে, ঊনিশ শতকে যখন ক্রিকেট সবে ডানা মেলতে শুরু করেছিলো সেসময় স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ক্রিকেটের তুখোড় এক বাজ। বাজ শব্দটা এখানে রূপক অর্থেই লিখেছি। ভক্তকূলের কাছে তিনি ‘দ্য ডন’ নামে পরিচিত।

পুরো নাম স্যার ডোনাল্ড জর্জ ব্র্যাডম্যান। ১৯০৮ সালের আজকের দিনে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের কুটামুন্ড্রায় জন্মগ্রহণ করেন এই কিংবদন্তি । মাত্র ১৯ বছর বয়সেই পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে নিজের ধার চিনিয়েছেন। প্রমাণ করেছেন, “আমি কেবল ক্রিকেটের জন্যই জন্ম নিয়েছি”। নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দিনের পর দিন চমক দেখিয়েছেন। যেকারণে খুব দ্রুতই তিনি সুপ্রতিষ্ঠিত হন ‘বিস্ময়কর বালক’ রূপে। এবং এর দু’বছরের মাথায় জাতীয় দলের হয়ে ডাক পান।

বলাবাহুল্য, তৎকালীন স্যার ডন অল্প কদিনেই যেসব রেকর্ডবুকে নাম লিখিয়েছেন, তার মাঝে অনেক রেকর্ড এখনো অক্ষতভাবেই রয়েছে। খুব বেশি আফসোস হয় তাঁর যে আরো অনেক কিছু দেওয়ার ছিলো। যদি আরো বেশি সময় ধরে খেলতে পারতেন তবে রেকর্ডের খাতায় আরো বিশেষকিছু যুক্ত হতো। যদিও অল্প ম্যাচ খেলে যা করেছেন তাতেই উনি বিশ্ব নন্দিত।

মাত্র ৫২টি ম্যাচ খেলেছেন। ঘরোয়াতে হয়েছেন সেরাদের সেরা। যোগ্যতা প্রমাণ করে জাতীয় দলে আসার পর যদিও শুরুটা খুব একটা ভালো যায়নি। প্রথম টেস্টে খুব একটা ভালো ফলাফল না করায় পরের টেস্টে ১২তম খেলোয়াড় হিসেবে নামতে হয়। সেদিন কি আদৌ কেউ কল্পনা করেছিলো, একদিন এই ছেলেই হবেন বিশ্ব নন্দিত। সারাবিশ্বে পরিচিত পাবেন সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার হিসেবে।

শুরুটা খারাপ হলেও পরবর্তী সময়কালে একের পর এক ভেলকি দেখিয়ে টেস্ট ক্রিকেটের ‘বিস্ময় বালক’ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ৫২টি টেস্টে তাঁর ২৯টি শতক এবং ১৩টি পঞ্চাশৌর্ধ ইনিংস রয়েছে। হয়তো ভাবতে পারেন এ আর এমন কি? তবে সেসময় এত অল্প সংখ্যক ম্যাচে ২৯টি শতক তুলে নেওয়া কি চাট্টিখানি কথা ছিলো? বর্তমানে টেস্ট ক্রিকেটে গড় ৫০ এর দিকে হলেই ধরে নেওয়া হয় দুর্দান্ত, সেখানে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিলো ৯৯.৯৪। শেষ টেস্টে ১০০ ছুঁইছুঁই করতে গিয়ে মাত্র ৪ রানের আক্ষেপে পুড়তে হয়। আজীবন হয়তো স্যার ডন এই ব্যাথা পুষেছেন।

টেস্ট ক্রিকেটের বিস্ময় বালক স্যার ডন ব্র্যাডম্যান এই ফরম্যাটের এক বিরল প্রতিভা। টেস্টে দুটি ত্রিপল সেঞ্চুরির ইনিংস রয়েছে তাঁর। যার মধ্যে একটি ইনিংস একদিনে খেলেছেন। ২৯৯ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকার রেকর্ডটিও একমাত্র তাঁর ঝুলিতে রয়োছে। ৩বার একই সিরিজে ৮০০+ রান সংগ্রহ করার বিরল কৃতিত্বের অধিকারীও তিনি।

জীবদ্দশায় নিজের নামের সাথে যুক্ত হয়েছে ‘নাইটহুট’ উপাধি। ১০বার উইজডেন বিশ্বসেরার খেতাব পেয়েছেন এবং ৮বার স্যার গ্যারি সোবার্স পুরষ্কার পেয়েছেন৷ দুর্দান্ত সব কৃতিত্বের কারণে স্যার ডন ব্র্যাডম্যান আজীবন সকল ক্রীড়ামোদীদের কাছে এবং ক্রিকেটবিশ্বে শতাব্দীর সেরা ক্রিকেটার হিসেবে বেঁচে রইবেন। ক্রিকেট বিশ্বে তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হবে।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই নক্ষত্র স্যার ডন ব্র্যাডম্যান আজীবন বেঁচে থাকুক সকল ক্রিকেটপ্রেমীর হৃদয়ের মণিকৌটায়।

Google search engine

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here